বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৭ অপরাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাবে যা করণীয় জমি আপনার, দখল অন্যের! কী করবেন? রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে সংবিধান, আইনী নৈরাজ্য ও অতীত ইতিহাস! শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতির মিথ্যাচার বনাম সাংবিধানিক সমাধান! সহায় সম্পত্তি পুণ্যের কাজে ওয়াক্ফ গঠন ও প্রাসঙ্গিকতা! শেকড়ের সন্ধানে সাঁইজির ধামেঃ লালন কি জাত সংসারে— রক্তাক্ত মাহমুদুর রহমানের কুষ্টিয়ায় আগমন বনাম দুধের মাছিদের আনাগোনা! জনপ্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্যার সম্বোধন কতটা সংবিধান ও আইনসম্মত! ক্রেতা ঠকে গেলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে যত আইনগত প্রতিকার! আইনে জামিন চর্চা বনাম বিচারকের পদত্যাগের দাবীতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ!
একজন স্বৈরশাসকের ভীষন ইন্টারেস্টিং চরিত্র বনাম বাস্তবতা!

একজন স্বৈরশাসকের ভীষন ইন্টারেস্টিং চরিত্র বনাম বাস্তবতা!

 

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিকঃ

আমি একজন পিএইচডি গবেষক। স্বৈরশাসকের রহস্যময় অধ্যায় নিয়ে লিখতে বসেছি। তার আগে বলে রাখি সদ্য গত হওয়া স্বৈরশাসক ছিলেন আমার কাছে একজন ভীষন ইন্টারেস্টিং চরিত্রের মানব। কিছু প্রশ্ন দিয়েই লেখাটি শুরু করি। একজন স্বৈরশাসককে ক্ষমতা থেকে সরাতে কত মানুষকে রাস্তায় নামতে হয়? কত মানুষ রাস্তায় নামলে স্বৈরশাসকের পতন ঘটানো সম্ভব? একজন স্বৈরশাসকের পতন ঘটাতে কোন কৌশল সবচেয়ে বেশি কার্যকরী? সহিংস প্রতিবাদ নাকি অহিংস আন্দোলন?

সহজ উত্তর। গবেষণা বলছে, কোন জনগোষ্ঠীর মাত্র ৩ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ যদি গণবিক্ষোভে যোগ দেন, তাতেই তারা সফল হতে পারেন। বিগত কয়েক দশকে বিশ্বে স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার পতন ঘটানোর সফল আন্দোলনের অনেক নজির আছে।

যখন জনগণ সরকারকে ভয় পায়, তখন স্বৈরাচার। আর যখন সরকার জনগণকে ভয় পায়, তখন স্বাধীনতা।

সকল ফ্যাসিস্ট পুলিশ রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য হলো নিরাপত্তা তদারকির ভীতি তৈরী করা। নাগরিকগণের ধারণা জন্মে যে তাঁদেরকে সব সময় নজরে রাখা হচ্ছে এবং তাদের কথাবার্তায় আড়িপাতা হচ্ছে। তাদের চিঠিপত্র পরীক্ষা করা হচ্ছে। তাদের বাড়িতেও যেকোনো সময়ে আগ্রাসন হতে পারে। সেকারণ স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হচ্ছে ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্য।

সব কথার বড় কথা হলো এই যে, আসমান এবং জমিনে একমাত্র ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের মালিক আল্লাহ তায়ালা। তিনিই সবকিছুর মালিক। পৃথিবীতের মানুষের জীবনের গতি প্রকৃতিও তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর নিয়ন্ত্রণের বাইরে কিছুই নেই। খালি চোখে অনেককে আমরা ক্ষমতাধর, দোর্দ- প্রতাপশালী হিসেবে দেখলেও তিনিই ইচ্ছা করে কাউকে ক্ষমতা দেন, আবার কারো কাছ থেকে কেড়ে নেন।

একটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি আরও পরিস্কার হয়ে উঠবে। পৃথিবীতে দীর্ঘ ৪০০ বছর শাসন করেছিল নমরুদ। সে চরম পর্যায়ের ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছিল পৃথিবীতে। পৃথিবীর ইতিহাসে আল্লাহর সঙ্গে প্রথম ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছিল সে। আল্লাহকে নিঃশেষ করার জন্য আসমান অভিমুখে টাওয়ার নির্মাণ এবং নিজেকে প্রভু দাবি করার দুঃসাহস করেছে এই জালিম। অবশেষে আল্লাহ তায়ালা শাস্তিস্বরূপ একটি মশা তার নাকে প্রবেশ করান। মশার অসহ্যকর জ্বালা-যন্ত্রণা থেকে নিজেকে বাঁচাতে মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত পর্যন্ত করে; কিন্তু এতেও তার শেষ রক্ষা হয়নি, বরং শাস্তির মাত্রা আরো বহুগুণ বেড়েছে।

শেখ হাসিনা বরাবর ই আমার কাছে ভীষন ইন্টারেস্টিং একটা চরিত্র ছিলেন। কারণ পৃথিবীর স্বৈরশাসকদের উপর আমার আগ্রহটা ছিল বেশী। বেশ কিছু বই পড়েছি। নিয়মিত আর্টিক্যাল পড়েছি। সারা পৃথিবীতে গনহত্যা চালানো সব ফ্যাসিস্টদের শৈশবের গল্পগুলো প্রায় একইরকম।
শুরু করি।

১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিন্তান বিভক্তির এক ঢামাডোলের মধ্যেই রাজনৈতিক পারিবারে তিনি জন্মেছিলেন। বাবকে খুব বেশী কাছে পায়নি। থাকতেন জেলে কিংবা রাজনৈতিক কাজে দেশের বিভিন্ন পরিসরে। পরিবারটির দিন কেটেছে এলোমেলো অবস্থায়। শেখ মুজিব ওই সময় প্রায় ১৩ বছর জেল খেটেছিলেন। তিনি ৪৭ থেকে ৭১ এর সময়টুকুতে বাড়িতে অবস্থান করতে পেরেছিলেন মাত্র দুই-তিন বছর। মুজিব বলেছিলেন,”আমার দেশের মানুষ আমার পরিবার,এবং সন্তানের থেকেও আগে আমার কাছে।”

মজার সংবাদ হলো হলো শেখ হাসিনা রাজনীতিক ছিলেন না। ছাত্রজীবনে (১৯৬৫) হাসিনা রোকেয়া হলে থাকা অবস্থায় ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। বেশ কিছু কর্মকান্ডে যুক্ত ছিলেন তিনি। তারপর বিয়ে করার পর সংসারে মন দিয়েছিলেন মোটামুটি। স্বামী এবং বোনের সাথে পশ্চিম জার্মানিতে থাকা অবস্থায় তিনি খবর শোনেন তার পুরো পরিবারকে হত্যা করা হয়েছে। খবর শুনেছিলেন মুজিবের মৃত্যুর পর দেশের সব জায়গায় আনন্দ উল্লাস চলছে, মিষ্টি বিতরণ হচ্ছে। তার বাবার লাশ অযতেœ পড়ে ছিল। কেউ দেখতে আসেনি। কেউ প্রতিবাদ করেনি। ঠিক এখনকার মত অবস্থা। ছোট বেলা থেকে হাসিনা যত স্যাক্রিফাইস করে এসেছিলেন তার সবগুলোই সম্ভবত তখন তার কাছে প্রতিহিংসা হয়ে ধরা দেয়। দীর্ঘদিন তাকে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। এই দেশে আসতে চেয়েও পারেননি। আরও অনেক বীভৎস্য কাহিনী। তবে ১৯৭২-৭৫ সময়কালে মুজিবের স্বৈরাচারী শাসন বাকশাল প্রতিষ্ঠার কথা এখানে আর বলতে চাচ্ছি না। তাহলে লেখা শেষ না হয়ে রাত পোহায়ে যাবে। এখনকার মতো আওয়ামী লীগের প্রতিটা নেতাকর্মী ভেবেছিলো শেখ হাসিনা আর ফিরবেন না। যেমনটি জয় ঘোষনা দিলেন আমার মা ও পরিবার আর রাজনীতি করবেন না। বাংলাদেশে না থাকলে আমাদের কিছু যায় আসে না। আপনারা বুঝবেন, ইত্যাদি। কিন্তু তিনি ফিরেছিলেন। কী নিয়ে ফিরেছিলেন জানেন? এই জাতির প্রতি প্রচন্ড ক্ষোভ, রাগ, এবং প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে। ওই ৭৫ সালটাই শেখ হাসিনাকে অমানুষ বানাতে, স্বৈরশাসক হতে উৎসাহিত করেছিল। ওনার ভিতর থেকে বাঙালী জাতির উপর মায়া মমতা নামক বোধশক্তি এক্কেবারে উধাও হয়ে গিয়েছিল। তিনি দেশে ফেরার পর রাজনৈতিক কুটবুদ্ধি দিয়ে তার হারানো সা¤্রাাজ্য রক্ষা করেন। তিনি কিভাবে রাজনীতিতে আসলেন আর রাজ্য ক্ষমতা ফিরে পেলেন বিস্তারিত জানতে মতিউর রহমান রেন্টুর লেখা “আমার ফাঁসি চাই” বইটি দয়া করে পড়তে পারেন। বইয়ে লেখা আছে, লাশ দেখলে তিনি খুশি হতেন এবং বেশী বেশী ভাত খেতেন অইদিন। তিনি বেশ্যাকে দিয়ে বাঙালীদের শাসন শোষণ করবেন বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি চেয়েছিলেন যে বাংলার মানুষ উনার বাবার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেনি, সে জাতির প্রতিটা পদে পদে যেন মুজিবকে দেখা লাগে। মুজিবের জন্য শোক করতে হয়। মুজিব নামটা যেন এই জাতির নামের সাথে জুড়ে যায়। রাস্তায় রাস্তায় ম্যুরাল, প্রতিটা জায়গার নাম তার পরিবারের নামে, টাকা থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ের সব কিছুতে মুজিবের আধিপত্য তিনি রেখেছিলেন। কারন একটাই, জেদ এবং রাগ। এই দেশ, দেশের মানুষের উপর তার বিন্দু পরিমান ভালোবাসা ছিল না। সেকারণ আয়নাঘর, টর্চার সেল, বিচারবহির্র্ভূত হত্যাকান্ড রক্তপাত কোনটির হিসাবই তিনি রাখেননি। তিনি চেয়েছিলেন ক্ষমতা। দেশের মানুষের উপর তার ক্ষোভ এতই বেশী ছিল যে তিনি এই জাতিকে বিশ্বাসও করতেন না। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার উপর তিনি ছিলেন ভীষণ নির্ভরশীল। কথিত রয়েছে,পালিয়ে যাওয়ার সময় যে পাইলট উনাকে ভারত নিয়ে গেছেন, সেই পাইলটের বিমানে চড়ে তিনি বিদেশ যেতে রাজী হননি। তার শংকা ছিল এই পাইলট আবার উড়িয়ে তাঁকে বাংলাদেশে না নিয়ে যায়। সেকারণ তিনি ভারতের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। ভারত বলেছিল বাংলাদেশের আকাশসীমায় হেলিকপ্টার যেতে পারবে না। অবশেষে দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনের পর তিনি রাগে, ক্রোধে ফুঁসে উঠে পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর করেন। স্বাক্ষর শেষে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এসব প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য-যা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। আনন্দের সংবাদ এই যে, শেখ হাসিনার নিজের প্রচারে বিশ্বাসী ছিলেন না। টাকার নোটগুলোর সব জায়গায় মুজিবের ছবি দিয়েছেন। নিজের ছবি দেননি। তাঁকে বেশ কিছু জায়গায় প্রস্তাব করা হয়েছিলো শেখ হাসিনার নাম এবং ছবি ব্যবহার করতে। তিনি রাজী হননি। এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছিলেন, “আমার ঢাকায় কোনো জায়গা জমি বাড়ি কোনোকিছুই নিজের নামে করা নেই। যা আছে সব টুঙিপাড়াতে। আমি একটা সময় পর রেহানাকে সাথে নিয়ে টুঙিপাড়াতে গিয়ে থাকবো। মানুষের বাসায় গিয়ে গিয়ে খেয়ে আসবো। টুংগিপাড়া ছাড়া আমার আর যাওয়ার জায়গা নেই।” উনি নিজের জন্য কোনো সম্পদ কেনেননি। দুর্নীতি লুটপাট কতটুকু নিজের কাছে রেখেছেন আর জয় মামা, পুতুল খালার সুইচ ব্যাংকে কী আছে তা আমার জানা নেই। কিছু অংশ তো অবশ্যই। সেটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে এমন মানুষ পৃথিবীতে আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না। তবে তার নেতাকর্মীরা করেছে। তিনি বাঁধা দেন নি। তাঁর পিওন ৪০০ কোটি টাকা গড়েছেন, তিনি কোন ব্যবস্থাও নেননি। নিজ মুখে স্বীকার করেছেনও। দয়া দেখিয়েছেন। দেশ ত্যাগ করার আগে পর্যন্ত তিনি সবার কাছে মুজিবের নাম দিয়ে গেছেন। জেদ থেকে। রাগ থেকে। শুধুমাত্র একটা ১৫ আগস্ট এর প্রতিহিংসা থেকে।

লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, পিএইচডি পবেষক ও সম্পাদক প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। ০১৭১৬৮৫৬৭২৮

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel